অস্ট্রেলিয়ায় বঙ্গবন্ধু পরিষদ ঐক্যবদ্ধ : ২২ বছরের বিভক্তি ভুলে সমবেত এক পতাকার নিচে 

অস্ট্রেলিয়ায় বঙ্গবন্ধু পরিষদ ঐক্যবদ্ধ : ২২ বছরের বিভক্তি ভুলে সমবেত এক পতাকার নিচে 

প্রেস বিজ্ঞপ্তি : দীর্ঘ ২২ বছরের বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে এক পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হলো অস্ট্রেলিয়ার তিনটি বঙ্গবন্ধু পরিষদ। গত ২৭ জুলাই ২০২৫, সিডনির ইংগেলবার্নস্থ দাওয়াত রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক সভায় তিনটি পৃথক বঙ্গবন্ধু পরিষদ একীভূত হয়ে গঠন করে একক বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়া। ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদকে সভাপতি ও আব্দুল জলিলকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় ৪৩ সদস্যের একটি শক্তিশালী কার্যনির্বাহী কমিটি।

বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে বিভক্ত ছিল বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়া। ১৯৮৯ সাল থেকে সংগঠনটি বহুজাতিক অস্ট্রেলিয়ান সমাজে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও বাঙালি সংস্কৃতির চর্চায় অনন্য ভূমিকা রেখে এসেছে। সময়ের বিবর্তনে ত্রিধাবিভক্ত হলেও প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জাতীয় দিবসসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছিল।

কিন্তু ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ষড়যন্ত্রমূলক অভ্যুত্থান, দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি এবং মৌলবাদী শক্তির তাণ্ডব- এসব পরিস্থিতি ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনে দেয়। ঐ বছরেরই ১৫ আগস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’-এর সম্মিলিত আয়োজনের মধ্য দিয়ে পটভূমি তৈরি হয় এই ঐক্যের।

এরপর দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে ড. নূর উর রহমান খোককে আহবায়ক নির্বাচিত করে তিন কমিটির নেতৃবৃন্দ। সেই সাথে কোর কমিটির সদস্য হোন ড. নিজাম উদ্দিন, আব্দুল জলিল, শাহ আলম সৈয়দ, ড. রতন কুন্ডু, মফিজুল হক ও আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীম। এই আহবায়ক কমিটি সব নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে তিন সংগঠনকে একীভূত করতে সক্ষম হোন, যেখানে মূলত প্রতিটি কমিটির সদস্যদের সদিচ্ছার ও জাতির পিতার প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের প্রতিফলন ঘটে ঐক্য প্রক্রিয়ায়।

নবগঠিত কমিটির শীর্ষ পদে রয়েছেন:

  • সভাপতি: ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ
  • সাধারণ সম্পাদক: আব্দুল জলিল

কমিটির অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন:

  • সহ-সভাপতি: ড. লাভলী রহমান, মফিজুল হক, রফিক উদ্দিন, মোহাম্মদ মনসুর, নির্মাল্য তালুকদার, মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার
  • যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক: ইফতেখার উদ্দিন ইফতু, আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীম, মাকছুদুর রহমান চৌধুরী সুমন
  • কোষাধ্যক্ষ: সাজ্জাদ সিদ্দিকী 
  • সাংস্কৃতিক সম্পাদক: নিলুফা ইয়াসমিন
  • যুগ্ম সাংস্কৃতিক সম্পাদক: পূরবী বড়ুয়া
  • সাংগঠনিক সম্পাদক: জিয়াউল কবির জিয়ন
  • যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক: আবু সুফিয়ান মেথন
  • প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক: আহসান হাবীব
  • যুগ্ম প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক: এনামুল হক
  • আপ্যায়ন সম্পাদক: ওবায়দুল হক
  • যুগ্ম আপ্যায়ন সম্পাদক: মাইনুল ইসলাম জনি
  • শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক: ব্যারিস্টার আমজাদ হোসেন
  • যুগ্ম শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক: হারাণ সরকার

কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন:

শাহ আলম সৈয়দ, ড. রতন কুন্ডু, ড. রফিকুল ইসলাম, ড. রবিউল করিম বিশ্বাস, ড. মিল্টন হাসনাত, নাসিম সামাদ, জামাল উদ্দিন আহমেদ, শাহদাৎ হোসেন, সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম, সেলিমা বেগম, হারুনুর রশীদ, মালিক শাফি জাকি, অপু সরোয়ার, নজরুল ইসলাম, আব্দুল হালিম, জহিরুল ইসলাম মহসিন, লিয়াকত আলী লিটন, জিনাশীষ বড়ুয়া, মশিউর রহমান হৃদয়, অবনী মাহবুব (মেলবোর্ন), ড. শুভজিৎ রায় (মেলবোর্ন)।

সাধারণ সভার শেষ অংশে সংবিধান পরিমার্জনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ড. রতন কুন্ডুকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় ৬ সদস্যের একটি উপকমিটি। অন্য সদস্যরা হলেন: ড. সিরাজুল হক, ব্যারিস্টার আমজাদ হোসেন, ড. মিল্টন হাসনাত, শাহ আলম সৈয়দ ও নির্মাল্য তালুকদার।

পাশাপাশি, সংগঠনের দীর্ঘদিনের অবদানকারী সদস্যদের নিয়ে গঠনের প্রস্তাব ওঠে একটি উপদেষ্টা পরিষদ। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয় এবং উপদেষ্টাদের কার্যপরিধি নির্ধারণে সংবিধান উপকমিটিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

একজন সদস্যের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয় যে, বিশেষ জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকই সংগঠনের পক্ষে পাবলিক অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।

সমাপনী বক্তব্যে আহ্বায়ক ড. নূর উর রহমান এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী তিন সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। নবনির্বাচিত সভাপতি ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলও তাঁদের বক্তব্যে ঐক্যবদ্ধ শক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সংগঠনের সুদৃঢ় পরিচালনায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সভা শেষে ড. নিজামের সভাপতিত্বে ও আব্দুল জলিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত হয়—আগামী ২৪ আগস্ট ২০২৫ রবিবার, ইংগেলবার্নের গ্রেগ পার্সিভ্যাল কমিউনিটি হলে জাতীয় শোক দিবস ২০২৫ বৃহৎ পরিসরে পালিত হবে। এ আয়োজনে সিডনির সব প্রগতিশীল সংগঠনকে যুক্ত করে একটি ঐতিহাসিক সম্মিলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। সবার অংশগ্রহণে নৈশভোজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।