দুটি পুঁথিকবিতা । বদরুজ্জামান আলমগীর 

দুটি পুঁথিকবিতা । বদরুজ্জামান আলমগীর 
পুঁথি বাংলা
বদরুজ্জামান আলমগীর 
 
শোন শোন শোন ভাই গো শোন অঞ্চলবাসী
তোমরা আমার মনে আছো দেশী ও বিদেশী। 
 
দেশে থাকো বৈদেশ থাকো ভাইবোন সকলে
রাতে দিনে খাটো জানি মেশিনে আর কলে।
 
খাটাখাটনি যতোই করো দেশের নামে খাড়া
মায়ের কথা ভাইয়ের কথা নিত্য পাগলপারা। 
 
সারা দুইনায় খুঁজিপাতি তোমার লাহান নাই
বুকেপিঠে কুটুম রাখো দেশ রাখো মাথায়।
 
তোমার কথা কইতে ভাইরে ভাষা নাহি পাই
চোখের পাতার কাজল বুঝি পানিতে ভিজায়।
 
আয় আয়, আয় আয়, আগুন পানির দোহাই
কোনটা মাটি কোনটা বাটি তোমারে শুধাই।
 
দেহ বলো স্নেহ বলো সাঁইরে মাটির পিঞ্জিরা
ছয় ঋতুতে বাজাই মন বাঁশি আর মন্দিরা।
 
সুখ আছে দুঃখ আছে ভাইবোনের লাহান
মেঘের পরেই রোইদ উঠে শোন গো বাজান।
 
ধৈর্য লইয়া বাঁচি আমরা শৈর্য লইয়া থাকি
মায়ামব্বত মোদের সাথী দয়ায় ঈমান রাখি।
 
পানির স্বভাব বাঙ্গালিদের আগুনের নহর
ঘরের মায়ায় বান্ধা তারই চৌদিকে পশর।
 
ব্যথা আছে সুতা আছে বানাই নকশিকাঁথা 
জ্যৈষ্ঠ গেলে আষাঢ় আসে মাথায় নাই ছাতা।
 
আয় আয় আয় আয় রে দেশমাতৃকার কাছে
চৈত্র গেল বৈশাখ আইলো শস্যাদি আর মাছে।
 
ভাগ করে নেই অভাব আর ভাগ করিয়া সুখ
জিয়ন মরণ নসিব আমার এই বাংলার বুক।। 
 
 
রক্ত পিছল নসিব
বদরুজ্জামান আলমগীর 
 
শোন শোন শোন ভাই গো শোন দিয়া মন
দরজা খুলে বাইরে দেখি হাওয়ারই শনশন
হাওয়া নয় গো হাওয়া নয় মায়েরও কান্দন
পুত্র কই গো, পুত্র কই বাজান কোথায় যায়
কোন দেশেতে লুকাও তুমি কোথায় গেলে পাই
পুত্র ছাড়া ঘর যাবো না ঘুরবো বনের পরে বন
 
বুকের ধন বুকে দাও গো আর কিছু না শুনি
বাটি চালাও বাটি চালাও আউলিয়া আর মুনি। 
কেমন দেশে পড়লাম আমি কেমন তাহার গতি
মায়ে কান্দে বোনে কান্দে বিলাপ করে সতী।
সবার চেয়ে সস্তা দেখি চোখের জল আর লৌ
রক্ত পিছল পথের মায়া সিঁদুর মোচে নতুন বৌ।
আয় আয় আয় বলি আমি একটি কথা শোন
বিশ্বাসে বলবো কথা পাই না এমন মানুষ কোন।
 
আমার ভাই, ও আমার বোইন একটা কথা বলি
জীবনের চেয়ে বড় আর কিছু নাই দিতে জলাঞ্জলি 
ছেলেরে কই লড়াইয়ে যা যারে বুক পাতিয়া খাড়া
বন্দুকেরও গুলি খাইয়া পোলায় বুক করে ঝাঁজরা।
ধন নাই মান নাই জীবন দিল দেশের দশের লাগি
যেই পাথর সেই পাথর একচুলও নড়লো না দরদী।
 
আর কী দিবো আর কী দিবো জীবনের অধিক
আমাদের যা করতে বলো করি তা ঠিক ঠিক
হাত দিয়েছি পাও দিয়েছি আমি বুক করেছি খালি
পানি নাই গো আঁজলায় ওঠে কারবালার বালি।
সন্তান নাই বাজান নাই কে থাকবে দুধে আর ভাতে
ঘুম নাই আমার বাংলা মা কাঁপে রক্ত আর উৎপাতে।।