অগ্রণীর দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্ত বরণ । রাঙিয়ে দিয়ে যাও

অগ্রণীর দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্ত বরণ । রাঙিয়ে দিয়ে যাও

মাফরুহা আলম : গত ২১ সেপ্টেম্বর অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া গান, কবিতা, নাটক এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনের রঙিন মোড়কে বসন্তকে বরণ করে নেয় সিডনিতে। শীত শেষে দক্ষিণ গোলার্ধে প্রকৃতি যখন সেজেছে নতুন সাজে, তখনই এই আয়োজন।

উডক্রফটের লেকের পারে ঝকঝকে বসন্তের রবিবারে যেন পরী আর প্রজাপতিদের মেলা বসেছিল। অগ্রণীর এলামনা, তাদের স্বামী ও সন্তানরা সকাল থেকেই সমবেত হন Spring Down Under — রাঙিয়ে দিয়ে যাও বসন্তবরণ অনুষ্ঠানে। রুচিরার নিপুণ হাতে শিশুরা মেতে ওঠে পছন্দসই মুখচ্ছবি চিত্রাঙ্কনে। অন্যদিকে মর্নিং টিতে নানা মুখরোচক খাবারের মাঝে অগ্রণীর মেয়েরা স্কুলের টিফিন টাইমের অনুকরণে পরিবেশন করে চটপটি ও পুরি, যা জমিয়ে তোলে শৈশবের পরিবেশ।

অমিয়া মতিন, সূচনা চৌধুরী ও সৈয়দা সুলতানা শৈল্পিক সাজে ফুটিয়ে তোলেন বসন্তের আবহ, যা অতিথিদের মুগ্ধ করে। দুপুর বারোটায় শুরু হয় অগ্রণীর বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রাণবন্ত উপস্থাপনা করেন শ্রাবন্তী কাজী ও ড. মাফরুহা আলম। Acknowledgement of the Country এবং বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে বসন্তবরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

অগ্রণীর মেয়েরা, স্বামী ও সন্তানরা একক ও যৌথ গান, কবিতা এবং নৃত্যে আসর মাতিয়ে রাখেন। শিল্পীবৃন্দ অমিয়া মতিন, ড. মাফরুহা আলম, মাহবুবা কান্তা ও শ্রাবন্তী কাজী পরিবেশন করেন “আজই দখিন দুয়ার খোলা” সহ প্রাণবন্ত কোরাস। শিশুশিল্পী নুরিয়া, আনাস, আরিয়া, আলিশা, ঈযান, এশান ও শায়ান কণ্ঠে শোনান “আমরা সবাই রাজা” এবং “Heal the World”। একক পরিবেশনায় ছিলেন অমিয়া মতিন ও ড. মাফরুহা আলম। ব্যান্ড সঙ্গীত পরিবেশন করেন সেরাজ আমিন, মোহাম্মদ খালেদ এবং শিশু শিল্পী আনাস।

যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন সিডনির পরিচিত মুখ — সোহেল খান (গিটার), রাশনান (কীবোর্ড) ও শাহরিয়ার (অক্টোপ্যাড)। নুরিয়া আবৃত্তি করে সুকুমার রায়ের কবিতা সৎপাত্র এবং আলিশা পরিবেশন করে নৃত্য। অনুষ্ঠানের সাউন্ড সিস্টেম পরিচালনা করেন আব্দুল মতিন।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল নাটক। বাচ্চাদের জন্য মঞ্চস্থ হয় সুকুমার রায়ের গল্প অবলম্বনে নির্মিত I Don’t Know Who Ate That, যার রূপায়ণ ও নির্দেশনায় ছিলেন ড. মাফরুহা আলম। অভিনয়ে অংশ নেন তাহমিনা খান, শুকতি সারিতা এবং তাদের সন্তান এশান ও ঈযান। নাটকটি শিশুদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

দুপুরে ফুচকা হাউজের পরিবেশিত খাবারের পর মঞ্চস্থ হয় পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের গল্প অবলম্বনে হাসির নাটক আট কলা। রূপায়ণ ও নির্দেশনায় ছিলেন ড. মাফরুহা আলম। নাটকের প্রধান চরিত্রে ছিলেন নাইয়ারা কেয়াসী ও তাঁর স্বামী ড. সাদাত আহমেদ। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন সেরাজ আমিন, সৈয়দা সুলতানা ও সূচনা চৌধুরী। দর্শকরা নাটকটি দেখে মুগ্ধ হন এবং করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিল মজার কুইজ পর্ব ও র‍্যাফেল ড্র, যেখানে সবার অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।

অনুষ্ঠানের শেষাংশে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় অগ্রণীর নির্বাহী কমিটির সদস্যদের:

  • অমিয়া মতিন (প্রেসিডেন্ট)
  • ড. মাফরুহা আলম (ভাইস প্রেসিডেন্ট)
  • ড. তনিমা আলী (জেনারেল সেক্রেটারি)
  • সৈয়দা সুলতানা (ট্রেজারার)
  • সূচনা চৌধুরী (আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন কোঅর্ডিনেটর)
  • নাইয়ারা কেয়াসী (লিয়াজোঁ অফিসার)।

প্রেসিডেন্ট অমিয়া মতিন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মাফরুহা আলম ধন্যবাদ জানান অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত অগ্রণীয়ান ও তাদের পরিবারকে।

অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ও অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতির মেলবন্ধন এবং প্রজন্মের ব্যবধান কমানো। সেটি সফলভাবে সম্পন্ন করার পর বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়। পুরো আয়োজনের বিভিন্ন স্মৃতি ক্যামেরায় বন্দি করেন মোজাহাঙ্গীর।