প্রশান্তিকায় লেখা প্রকাশের নেপথ‍্যে । পিয়ারা বেগম 

প্রশান্তিকায় লেখা প্রকাশের নেপথ‍্যে । পিয়ারা বেগম 

২০২০ সাল। বাংলাদেশসহ বিশ্বে করোনা মহামারীর মহাপ্রলয় চলছে। আমাদের  দেশের জন্য এ মরণব্যাধি ছিল মূলত এক ভয়ংকর কঠিন বাস্তবতা। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। করোনা রোগীদের ভীরে হাসপাতাল সয়লাব। প্রথিতযশা ডাক্তারসহ নামীদামী হেন লোক নেই যে করোনার কারণে মারা যায়নি। বিশেষ করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই আক্রান্ত হতেন বেশি। মৃত্যুর হারও বেশি ছিল তাদেরই।   

তাই জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সপ্তাহে ২/৩টা পোস্ট দিতাম ফেসবুকে। একটু ঠান্ডা, জ্বর কাশি হলেই মানুষ মৃত্যু ভাবনায় বিমর্ষ থাকত। বার্ধক্যদের নিয়ে ছিল আরও ভয়। স্বজনরা তাদেরকে নিয়ে আতংকে থাকতেন। বুকের ভেতরটা কেবল ধুক ধুক করত। আসলে মানুষের আত্মবিশ্বাসকে গুড়িয়ে দিয়েছিল এই করোনা আতংক। তাদের ভেতরকার শক্তিকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিল। আমিও ভয়ে জুবুথুবু হয়ে থাকতাম সবসময়। ভাবতাম, এই বুঝি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছি।

 

সে মুহূর্তে মনে হলো করোনা মহামারীরতে করোনায় বার্ধক্য ভাবনা নিয়ে একটা নিবন্ধ লিখলে কেমন হয়? বলা মাত্র মস্তিষ্কে সিগনাল চলে গেল। মস্তিষ্ক শুরু করে দিল তার কার্যক্রম। লেখক হিসাবে দায়বদ্ধতার অন্তর্নিহিত অনুভূতি ও বোধ আমাকে ভীষণভাবে পীড়ন করছিল। একপর্যায়ে একটা দুর্দমনীয় তাড়না আমাকে অস্থির করে তুলল। বিবেকও পর্যুদস্ত হয়েছিল ভীষণভাবে। কেননা, করোনার সংক্রমণে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুবেদনা আমার হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। আসলে ব্যাটারি ডাউন হওয়া গাড়িকে সবাই মিলে একটা জোরে ধাক্কা লাগালে যেমন চলতে শুরু করে, ব্যাপারটা অনেকটা তেমনি। আর আমিও তাড়নায় তাড়িত হয়ে উদ্দীপিত হয়ে লিখে ফেললাম নিবন্ধটি। কে যেন মনে হচ্ছিল কে যেন আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিল।

 

নিবন্ধটি কিছুটা মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায় লেখা বিধায় একটা দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগছিলাম। দোনোমোনো কাজ করছিল। পোস্ট করব কি না? তাই দ্বিধামুক্ত হতে পাঠালাম একজন কথাসাহিত্যিক ও কলামিষ্ট আত্মীয়ের কাছে। লেখাটা পড়ে কি মনে করে তিনি সরাসরি পাঠিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়া সিডনি থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা প্রশান্তিকা’য়। প্রশান্তিকার সম্পাদক আতিকুর রহমান শুভ লেখাটা ‘প্রশান্তিকায়’ প্রকাশ করেন। আর লিংক পাঠালেন লেখা প্রেরকের বরাবরে। আমার আত্মীয় কথাসাহিত্যিক আবার আমার বরাবরে লিংক পাঠালেন। 

 

আমি তো বিস্ময়াভিভূত! তিনি আরও বললেন – মোবাইল ফেসবুকে যেন লিংক শেয়ার করে দিই। পরে জেনেছি করোনাকালীন সময়ে লেখাটা সময়োচিত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তিনি লেখা প্রশান্তিকায় পাঠিয়েছিলেন। আমি আমার টাইমলাইনে শেয়ার করি।  ততোক্ষণে লিংক ওপেন করে দেখি ওয়েবসাইটে অনেক শেয়ার হয়ে গেছে। ‘প্রশান্তিকা পত্রিকা’ সম্পর্কে আমি আসলে কিছুই জানতাম না। মূলত ঐ লেখাটাই আমাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে প্রশান্তিকার সম্পাদকের কাছে। আর আমিও প্রশান্তিকাকে আমার শিক্ষানবিশ লেখকসত্তার বিকাশের মাধ্যম হিসাবে বেছে নিলাম। 

 

উল্লেখ্য যে, লেখার শিরোনাম ছিল ‘করোনায় বার্ধক্য ভাবনা।’ প্রশান্তিকায় প্রকাশকাল ২৪/০৬/ ২০২০। এরপর থেকে করোনা বিষয়ক আরও নিবন্ধ লিখেছি। ‘আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে’ তিন পর্বে লেখা প্রকাশ করেছি। করোনা মহামারী: মৃত্যু ভাবনা এটা লিখেছি ৪/১২/২০২০।  ‘ক'দিন বাদেই স্বাস্থ্যবিধি কোমায় রেখে চলবে বাড়ি যাওয়ার কাফেলা।’ ২৮/০৪/২০২১ তারিখে এই লেখাটা এক কিলোর উপরে শেয়ার হয়েছিল।

‘প্রশান্তিকা’ প্রশান্ত পারের বাংলা কাগজ, একটি জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা। পত্রিকার সম্পাদক আতিকুর রহমান শুভ ভাইয়া একজন নিরহংকার, বিনয়ী ও  মিতভাষী। তাছাড়া এ পত্রিকাটিও সৃজনে-মননে, সৃষ্টিতে বিবিধ বৈশিষ্ট্যের সমাহারে সজ্জিত মূলত ‘প্রশান্তিকাকে’ জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। প্রথমত লেখকের লেখার মান যাচাই-বাছাইয়ে তারা খুবই আন্তরিক। সাহিত্য গুণে-মানে সমৃদ্ধ হলে সংশ্লিষ্ট লেখকের লেখা ‘প্রশান্তিকায়’ প্রকাশ করে থাকেন। সাথে সাথে লেখকের মেসেঞ্জারে লিংক পাঠিয়ে দেন। এমনি করে একজন নিয়মিত লেখক যখন পাঠাকপ্রিয়তা অর্জন করে তখনই লেখককে ‘প্রশান্তিকার’ পক্ষ থেকে লেখকের ছবিসহ কলাম লেখার কভার করার আহ্বান জানানো হয়। 

 

আমার কলামের নামকরণ করা হয়েছিল ‘ঝরনা কলম।’ 

লেখা প্রশান্তিকায় প্রকাশ হওয়ার পর ওয়েবসাইটে শেয়ার করেন অনেকেই। এই শেয়ার হওয়া এটাও লেখকের একটা বিরাট অর্জন। আসলে ইঞ্জিনের জ্বালানির মতো মানুষেরও প্রয়োজন তার কাজের স্বীকৃতি। এক্ষেত্রে স্বীকৃতি মানেই প্রেরণা। এতে লেখকের নির্জীব মানসিক শক্তি জাগাতে অনন্য ভূমিকা রাখে।  

বিশেষ ধর্মীয় উৎসব, জাতীয় দিবস উপলক্ষেও লেখা আহ্বান করেন। নির্বাচিত লেখকদের নাম ঘোষণা করে আকর্ষণীয় করে পোস্ট দিয়ে আগেই পাঠকদের অবহিত করেন। এতে করে লেখকরাও উজ্জীবিত হোন। পাঠকরাও লেখা পাঠে আগ্রহী হোন।

 

তারপরেও আছে প্রশান্তিকা সেরা লেখক পুরস্কার। একটা জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট লেখকের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। আমার পুরস্কার প্রদান করেছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী প্রখ্যাত মনোবিশারদ ঔপন্যাসিক, গল্পকার, কলামলেখক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, কবিতা এবং শিশুতোষ রচনাসহ আত্মজীবনীমুলক বইয়ের লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক। আমার পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন শিশুসাহিত্যিক ও কলাম লেখক অনীলা পারভীন। পরে প্রশান্তিকার সম্পাদক আতিকুর রহমান শুভ ভাইয়া বাংলাদেশে এসে আমার হাতে পুরস্কাটি তুলে দেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা/২০২৩, ৬ ফেব্রুয়ারি। 

‘প্রশান্তিকা’ একটি জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা। এটি লেখকদের সৃজনশীল বিকাশে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। অনেক খ্যাতিমান কবি-লেখকদের সরব উপস্থিতি প্রশান্তিকা হয়ে উঠেছিল বিশ্ববাসীর প্রিয় পত্রিকা। হঠাৎ হ্যাকড হওয়ায় অনেক স্বনামধন্য লেখকের মূল্যবান লেখা নষ্ট হয়ে গেছে। সম্প্রতি আবারও বৃহৎ পরিসরে লেখক-পাঠকের পদচারণায় মুখরিত হবে ‘প্রশান্তিকা’ প্লাটফর্ম। এই বিশ্বাস দৃপ্ত  আশাবাদে উদ্দীপ্ত হয়ে প্রার্থনা করছি। যেন এর সমৃদ্ধির সুগন্ধি মৃগ কস্তুরির মতো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে পূর্বের ঐতিহ্যকে ধারণ করে।