ডায়েরির পাতা থেকে উজ্জ্বলের সুরের জাদু: দর্শক প্রতিক্রিয়া
আতিকুর রহমান শুভ : বছর ঘুরে তৃতীয় পর্বে ডায়েরির পাতা থেকে গান শোনালেন শিল্পী নিজাম উদ্দিন উজ্জ্বল। তাঁর গানের ডালিতে কি ছিলো, কি ছিলো না? নজরুল সংগীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত, হারানো দিনের বাংলা গান, আধুনিক বাংলা গান, ঠুমরি, গজল, দেশের গান—সবই গেয়েছেন অনবদ্য দক্ষতায়।
গত ৫ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় সিডনির হার্সটভিল সিভিক থিয়েটার সজ্জিত ছিলো আমন্ত্রিত সুধীজন, শিল্পী ও শ্রোতামণ্ডলীর দ্বারা—যেন একটি বৃহৎ মিলনমেলা, যেন কতদিন পরে আবার কারো সাথে কারো দেখা হচ্ছে। আর এসকলের একমাত্র উপলক্ষ্য ছিলো প্রশান্ত পারের তরুণ দ্যুতি উজ্জ্বলের গান। সিডনি মিউজিক ক্লাব আয়োজিত সংগীত সন্ধ্যায় বাদ্যযন্ত্রে ছিলেন প্রতিশ্রুতিশীল সোহেল খান, সুবীর গুহ, নীলাদ্রি চক্রবর্তী, ইয়াসির পারভেজ ও শাহরিয়ার। হলভর্তি দুই শতাধিক দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন উজ্জ্বল ও তাঁর সহশিল্পীদের পরিবেশন।
গত দুই বছর ডায়েরির পাতা থেকে অনুষ্ঠান ঘড়ির কাটায় ঠিক সময়ে শুরু হলেও যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে এবারের পরিবেশনাটি শুরু করতে প্রায় ঘন্টাখানেক বিলম্ব হয়। তবুও দর্শকেরা সুশৃঙ্খল অপেক্ষায় ছিলেন। ‘কেন কাঁদে পরাণ কি বেদনায় কারে কহি’—নজরুলের বিখ্যাত ঠুমরি দিয়েই তিনি অনুষ্ঠান শুরু করেন। তারপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশীনি’ এর সাথে ‘ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে’ দিয়ে চমৎকার মেডেলি পরিবেশন করেন। এসময় দর্শকেরা তাঁর সাথে কণ্ঠ মেলান।
শিল্পী এর পরপর গেয়েছেন—কোয়েলিয়া গান থামা এবার; জীবনানন্দ হয়ে সংসারে আমি; আমার আঁধার ঘরে শুধু দোলে তোমার স্মৃতির দোলনা; আমাকে পুড়িয়ে তুমি মেটেনি সাধ কিছুতে; আমি কি তোমার মত এত ভালোবাসতে পারি; পাহাড়ের কান্না দেখে তোমরা তাকে ঝর্ণা বলো; যেভাবে বাঁচি বেঁচে তো আছি জীবনের মাঝামাঝি। বিরতির আগের শেষ গানটি ছিলো সদ্য প্রয়াত লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীনকে ট্রিবিউট করে গাওয়া—‘এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা সুরমা নদী তটে’।
অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধে শিল্পী তাঁর নিজের মত করে সব বাংলাদেশের গান পরিবেশন করেন। বিরতির পরে তিনি অনুরোধের গান শোনান। এসময় ওপার বাংলার জনপ্রিয় ও ধ্রুপদী গান ও গজল পরিবেশন করেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শচীন দেব বর্মণ, অখিল বন্ধু ঘোষ ও অন্যান্য শিল্পীদের বাংলা গানের সাথে জগজিৎ সিং, বেগম আখতার, রশিদ খান, মেহেদী হাসান প্রমুখ প্রখ্যাত শিল্পীর গজলও গেয়ে শোনান। গানের মাঝে উজ্জ্বল অর্থসহ গল্পের মতো করে বিশ্লেষণ করেন। দর্শকেরা আনন্দের সাথে তা উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠান দেরিতে শুরু হওয়ায় শেষ হতে প্রায় মধ্যরাত হয়ে যাচ্ছিলো। এছাড়া দর্শকেরা অনেক গান অনুরোধ করছিলেন। হল বন্ধ করা হবে জানালে এক দর্শক বলে উঠেন—“তাহলে চলেন, গাড়ি পার্কে যেয়ে সারারাত গান শুনি।” শিল্পী প্রায় তিরিশটি গান গেয়ে শোনান এবং প্রতিটি গান দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উজ্জ্বলের সর্বশেষ গানটি ছিলো একটি দেশের গান—‘আরেকবার ফিরাইয়া দাও, তোমার জোনাক জ্বলা উঠান’। দেশের ভালো হোক, সব মানুষ ভালো থাকুক এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।
অনুষ্ঠানটিতে চমৎকার সঞ্চালনা করেন নোরা পারভেজ নায়না এবং দর্শক অভ্যর্থনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন শিখা গোমেজ। অনুষ্ঠান বিরতিতে মুখরোচক খাবার নিয়ে এসেছিলো ফুচকা হাউজ। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলো প্রশান্তিকা।
অনুষ্ঠান শেষে শিল্পী নিজাম উদ্দিন উজ্জ্বল প্রশান্তিকাকে জানান, দর্শকের অনুরোধে কিংবা অভিপ্রায়ে ডায়েরির পাতা থেকে অনুষ্ঠানটি তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করলো। এবার এত বেশি দর্শক আমাদের গান শুনতে চেয়েছেন যে হলের সিটসংখ্যার বেশি টিকেট দিতে হয়েছে। অনেকে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের গান শুনেছেন। দর্শকের এই ভালোবাসার কারণে আমরা বারবার গান নিয়ে ফিরে আসতে চাই।
সিডনিতে তাঁর প্রথম একক অনুষ্ঠান হয়েছিলো ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই, বারউড ফাংশন সেন্টারে। সেই অনুষ্ঠানের নাম ছিল তিলোক কমোদ। সেদিন তাঁর সঙ্গে সংগত করেছিলেন তবলায় মিহির এবং গিটারে জাহেদুল ইসলাম সোহেল। সিডনিতে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিলের আয়োজনে বৈশাখী মেলায় নিয়মিতভাবে পথ প্রোডাকশন্স সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। প্রায় প্রতিবছর সেই আসরের মধ্যমণি হয়ে গান পরিবেশন করেন উজ্জ্বল। পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর পথ প্রোডাকশন্স ব্যানারে সিডনিতে জনপ্রিয় হয়েছিলো আরেকটি অনুষ্ঠান—জলসা। জলসা-য় মূল গায়ক ও সংগীতশিল্পী হিসেবে একাধিক সিরিজে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
দর্শক প্রতিক্রিয়া :
ডায়েরির পাতা থেকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন দুই শতাধিক দর্শক-শ্রোতা। তাঁদের অধিকাংশই অস্ট্রেলিয়াবাসী শিল্পী, সংগঠক ও সংগীতপিপাসু শ্রোতা। প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে আমরা বেশ কয়েকজন দর্শক-শ্রোতার প্রতিক্রিয়া নিয়েছি।
সিরাজুস সালেকীন (প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, প্রতিষ্ঠাতা—প্রতীতি) :
উজ্জ্বলের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—তাঁর রয়েছে খুব সুমধুর একটি কণ্ঠস্বর, যা কখনই সুর থেকে বিচ্যুত হয় না। একজন শিল্পী যত বেশি সাবমিসিভ বা বিনয়ী হয়, তত বেশি তিনি দর্শকের প্রাণ ছুঁতে পারেন। উজ্জ্বল তাঁর গান দিয়ে প্রশান্ত সাগর পারের এই দেশে বাংলা সংস্কৃতিকে আরও উজ্জ্বল করুক—এই প্রত্যাশা আমার।
মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক (লেখক, গবেষক, অধ্যাপক) :
প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। আমি একা নই, আমার মতো আরও অনেকে এই অনুষ্ঠান মিস করতে চান না। কারণ উজ্জ্বল আর তাঁর বাদ্যযন্ত্রী বন্ধুরা মিলে শ্রোতাদের মনে এমন একটা তীব্র ভালোলাগার অনুভূতি ও আবেশ সৃষ্টি করেন, যা তাঁদেরকে এই দলটির পরবর্তী বছরের পরিবেশনার জন্য অপেক্ষা করতে শেখায়।
উজ্জ্বলের গানের গুণাগুণ বিচার করার কোনো যোগ্যতা আমার নেই। তবে একজন মুগ্ধ শ্রোতা হিসেবে আমি শুধু এটাই বলব—ওর সব গান, গায়কী এবং পরিবেশনা সহজ কথায় অসাধারণ।
গামা আব্দুল কাদির (সিনিয়র সিটিজেন, সংগঠক) :
আমাদের সৌভাগ্য, উজ্জ্বলের মতো এক প্রতিভা কমিউনিটিতে রয়েছেন, যিনি আমাদের বাঙালিত্বকে গর্বিত করেছেন। প্রতিবছর আমি তাঁর গান শোনার জন্য অপেক্ষায় থাকি। এবারও মন ভরে তাঁর গান উপভোগ করেছি।
এজাজ মামুন (সংগঠক ও লেখক, ক্যানবেরা) :
২০০০ সালের পরে, সম্ভবত ২০০২ সালে আমরা তখন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাথে জড়িত। উজ্জ্বলকে পরিচিত করিয়ে দেন প্রয়াত ড. আব্দুর রাজ্জাক। সেই ছোট্ট উজ্জ্বল থেকে আজ পরিপূর্ণ এক বাঙালি দ্যুতি উজ্জ্বল। তখন থেকেই আমরা তাঁর কণ্ঠমাধুর্যে মুগ্ধ। ক্যানবেরা থেকে তাই ৩০০ কিলোমিটার দূরে সিডনি এসেছি তাঁর গান শুনতে। বরাবরের মতো প্রাণভরে গান শুনেছি, দেখা হয়েছে পরিচিত ঋদ্ধ সাংস্কৃতিক অনেক বন্ধুর সাথে। উজ্জ্বল আমাদের সকলকে এভাবে আনন্দে ভরিয়ে দিক—এই কামনা করি।
জন মার্টিন (নাট্যজন ও নির্দেশক) :
উজ্জ্বল যেখানেই গান গায়—আমি যাবার চেষ্টা করি। ওর জন্য নয়, আমি যাই আমার জন্য। ওর গান শুনলে ধ্যান করতে ইচ্ছে করে। বিশেষ করে ঐ ঠুমরি গাইলে মনে হয়—আহা! শেষ হলো কেন!
গত তিন বছরে দেখেছি—ওর গায়কী যেন আরও উজ্জ্বল হচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চাঙ্গ ঘরানার গানে ওর জুড়ি নেই। চমৎকার দম, গলার উঠা-নামা, ভোকাল কন্ট্রোল—কখন মাউথপিসের সামনে আসতে হবে, কখন পিছনে যেতে হবে—সবই ওর কাছে এখন নস্যি মনে হয়। বেশ ওস্তাদি কায়দায় বসেছে। বসার ভঙ্গি বলে দেয়—এই যে মাইক, এই যে হারমোনিয়াম, গানের পাতা, বাকিরা—সবাই আমার সঙ্গে আছে। আর ‘আই অ্যাম ইন কন্ট্রোল’। এই আত্মবিশ্বাস না থাকলে অমন কঠিন গানগুলো কি এক নিশ্বাসে গাওয়া যায়?
তিন ঘণ্টা যথেষ্ট নয়—উজ্জ্বলের জন্য নয়, আমাদের জন্যও নয়। আগামী বছর এই অনুষ্ঠান শুরু হোক রাত বারোটায়, আর শেষ হবে ভোর পাঁচটায়। রাতের প্রহরের সাথে মিলিয়ে উজ্জ্বল গান গাইবে, আমরা রাতকে আবিষ্কার করব নতুন করে। হোক না এমন আয়োজন।
উজ্জ্বলের টিমে ছিলেন নীলাদ্রি, সোহেল, শাহরিয়ার, সুবীর এবং মিহির—এরা উজ্জ্বলের গানে আরও আলো জ্বালিয়েছে, জুড়ে দিয়েছে রং।
রোকেয়া আহমেদ (সংগঠক, পড়ুয়ার আসর) :
উজ্জ্বল হার্স্টভিল সিভিক সেন্টারের দরবারি ঘরানায় সাজানো মঞ্চে এক উজ্জ্বলিত নক্ষত্রের মতোই বিরাজ করছিলো! তাঁর গায়কী, অনবদ্য কণ্ঠশৈলী, মজলিসী পরিবেশনা আর সব যন্ত্রীদের অসামান্য বাজনায় ক্লাসিক, আধুনিক, রবীন্দ্রসংগীত এবং গজল—সব মিলিয়ে হলভর্তি মানুষকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিল পুরোটা সময়!
গান গাইলে এভাবেই গাইতে হয়—সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে, যত্নের সাধনা দিয়ে। এরকম গানই মনে করিয়ে দেয়—সংগীত তো আসলে নিজেকে অর্পণ করার নাম; সংগীত ঈশ্বর আরাধনারই আরেক নাম।
সুরঞ্জনা জেনিফার রহমান (সংগঠক, চিকিৎসক) :
এক শব্দে যদি কেউ ডায়েরির পাতা থেকে অনুষ্ঠানের বর্ণনা করতে বলে, তাহলে আমি বলব—“অপূর্ব।”
শচীন দেব বর্মণের এই গানটার সাথে সাথেই আমার মন জয় হয়ে গেলো—
“বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছো দোলা,
রঙেতে রাঙিয়া রাঙাইলে মোরে এ কী তব হোরি খেলা...
সরকার কবিরউদ্দিন (আলোকচিত্রী, লেখক) :
ডায়েরির পাতা থেকে আমার প্রিয় অনুষ্ঠানগুলোর একটি। সারাবছর এর জন্য অপেক্ষা করি। ব্যতিক্রম অথচ শ্রোতার সাথে এই অনুষ্ঠানটির সংযুক্তি অনবদ্য।
শাহীন শাহনেওয়াজ (নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার) :
উজ্জ্বল আবারও মুগ্ধ করে দিলো সিডনিকে। তাঁর সংগীতের সেই মোহময় আবেশ এখনো কাটেনি। গত রোববার সন্ধ্যায় আমরা অনুষ্ঠান উপভোগ করেছি, আর আজও সেই সুর যেন ভেতরে গুনগুন করছে। তাঁর মতো একজন শিল্পী সিডনিতে আছেন—এটা আমাদের জন্য গর্বের ব্যাপার। আমরা সৌভাগ্যবান যে তাঁর মতো গায়কের অনুষ্ঠান সামনাসামনি দেখতে পাই। গত বিশ-বাইশ বছর ধরে আমরা সিডনিতে তাঁর সুরের যাদুতে আচ্ছন্ন হচ্ছি। তাঁকে নিয়ে আমরা গর্বিত, আর আশা করি ভবিষ্যতেও এ রকম আরও সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দেবেন আমাদের।
নাফিসা কাদরী স্বাগতা (শিল্পী ও সংগঠক) :
টানা তৃতীয় বছর এবং আবারও নিজাম উদ্দিন উজ্জ্বল উপহার দিলেন এক অসাধারণ সংগীত সন্ধ্যা। আমার অন্য পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু নিজেকে থামাতে পারিনি। শেষ মুহূর্তে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম—আমরা কি আসতে পারি? তিনি হাসিমুখে জানালেন, শেষ দুইটি সিট আমাদের জন্য রেখেছেন, যা আসলে তাঁর স্ত্রী শিখার জন্য নির্ধারিত ছিল! তাঁকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, আর শিখার কাছে রইল বিনীত দুঃখপ্রকাশ।
নজরুল থেকে রবীন্দ্রসংগীত, বিরল বাংলা গান, ঠুমরি, গজল, সুফি ও দেশের গান—সবই গেয়েছেন তিনি অনবদ্য আত্মনিবেদনে ও দক্ষতায়।
তিনি সাহস করে গেয়েছেন শাহনাজ রহমতুল্লাহর “শুধু কি আমার ভুল” এবং বেগম আখতারের “কয়েলিয়া”—দুটি গানই নারীকণ্ঠের গভীর আবেগে বাঁধা। অথচ উজ্জ্বল সেই গানগুলোকেও প্রাণবন্ত করে তুলেছেন নিজস্ব সৌন্দর্য ও মাধুর্যে। তাঁর গাওয়া নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর “জীবনানন্দ হয়েও” এবং রশিদ খানের “আওগে যখন তুমি সজন”—দুটিই ছিল স্মরণীয়।
নোমান শামীম (সম্পাদক—মুক্তমঞ্চ, লেখক, রাজনীতিবিদ) :
আমি এবং আমার স্ত্রী সাথীকে নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রমুগ্ধের মতো উজ্জ্বলের গান উপভোগ করেছি। আমাদের এখানে অনেকেই গান করেন, শিল্প-সাহিত্যের সাথে জড়িত রয়েছেন। উজ্জ্বল আমাদের প্রশান্তপারে এই প্রজন্মের ক্লাসিকাল সংগীতের জ্যোতির্ময় শিল্পী। তাঁর বৈঠকী ঘরানার পরিবেশনা অনবদ্য এবং উপভোগ্য।
আবিদা রুচি (সংগঠক, সাংস্কৃতিক কর্মী) :
ডায়েরির পাতা থেকে—সিজন থ্রি। এরকম মেলোডি মিউজিক নাইটের জন্য হাজার মাইল পথ পাড়ি দেওয়া যায়। তবে অতটা ঠিক করতে হয়নি আমার; টানা পাঁচ ঘণ্টা ড্রাইভ করে ফার্মহাউজ ট্রিপ একটুখানি শর্ট করে বন্ধুদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঠিক প্রোগ্রামে হাজির হয়েছি।
হ্যাটস অফ উজ্জ্বল ভাই অ্যান্ড ইওর ব্রিলিয়্যান্ট মিউজিশিয়ানস! সত্যি বলতে, আপনার এই প্রোগ্রামের জন্য আমি প্রতি বছর অপেক্ষা করি। সেদিন একজন আমাকে দেখে বললেন—“আপনি আবার কখনও কোনও প্রোগ্রামে যান নাকি?” সো ট্রু! আসলেই যাই না। নিজের প্রতি অত্যাচার মনে হয়। সেজেগুজে সারাদিন নষ্ট করে ফটোসেশন করতে নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরে যেতে একেবারেই ভালো লাগে না আর। ডায়েরির পাতা প্রোগ্রামে শুধু গান শুনতে যাই—মনপ্রাণ ভরে গান শুনতে।
সাকিনা আক্তার (শিল্পী ও সংগঠক) :
উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতোই জ্বলজ্বলে হয়ে রয়েছে আমাদের উজ্জ্বলের সংগীত সন্ধ্যা। অসাধারণ গায়কির সাথে অনবদ্য যন্ত্রশিল্পীরা অনুষ্ঠান নিয়ে গেছেন এক ভিন্ন মাত্রায়। কখনো অনুভব করেছি মিষ্টি প্রেমের আবেগ, আবার কখনো অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে ছিলাম। সংগীতের অনুবাগী না হলে এই সাধনা হয় না। প্রত্যেকে হৃদয় হরণ করেছেন যার যার পারদর্শিতায়।
সুবীর গুহের তবলা অনিন্দ্য। গিটারে সোহেল খান একজন জাতশিল্পী। নীলাদ্রি আমাদের গৌরব—কিবোর্ড, গান সবকিছুতেই অনন্য। মিহিরের সেতার ছিল দুষ্প্রাপ্য এক বাজনা। অক্টোপ্যাডে শাহারিয়ার জুড়ে দিয়েছেন প্রাণ। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি অধরা মাধুরী ছন্দবন্ধনে বাঁধা এই আয়োজনে।
ইসরাত জাহান সুবর্ণা (সংগঠক) :
মঞ্চের সামনে বসে এই প্রথম উজ্জ্বলের গান শুনলাম। মুগ্ধ হওয়ার মতো পরিবেশনা। আমার বেশ কয়েকটি প্রিয় গান তাঁর কণ্ঠে শুনেছি সেদিন সন্ধ্যায়। ওকে দেখতেও মনে হচ্ছিলো—আমার মহম্মদপুরের পাশের বাড়ির সেই ছেলে, যিনি এখন বড় প্রতিভা হয়ে বিকশিত হয়েছেন। আমি উজ্জ্বলের গান বারবার শুনতে চাই।




