সিডনির শীতের সন্ধ্যায় গানে গানে উষ্ণতা ছড়ালেন হিউবার্ট খোকন ও সহশিল্পীরা

সিডনির শীতের সন্ধ্যায় গানে গানে উষ্ণতা ছড়ালেন হিউবার্ট খোকন ও সহশিল্পীরা
শিল্পী হিউবার্ট খোকন

প্রশান্তিকা প্রতিবেদন : সাংস্কৃতিক আয়োজন যখন একজন নাট্যজনের হাতে পরিকল্পিত হয়, তখন তা হয়ে ওঠে কেবল গান-বাজনার আসর নয় একটি অভিনব শিল্পপ্রকাশ। গত ২১ জুন সিডনির এক শীতল সন্ধ্যায় ঠিক এমনই এক হৃদয়স্পর্শী সন্ধ্যার আয়োজন হয়েছিল নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী গায়ক হিউবার্ট খোকনকে কেন্দ্র করে। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন নাট্যজন জন মার্টিন, যাঁর পরিকল্পনায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল চমক, স্নিগ্ধতা এবং সৃজনশীল বিস্ময়।


অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেখা যায় এক অভিনব বিন্যাস। গিটার হাতে তুলে দেওয়া হলো তবলা শিল্পী অভিজিৎ দাঁ’কে, আর তবলায় বসিয়ে দেওয়া হলো গিটারিস্ট সোহেল খানকে। একইভাবে বাদ্যযন্ত্র বদলালেন নীলাদ্রি, ফাবিহা, খালিদ ও শাহরিয়ার জামাল। সঞ্চালকের কৌশলে এই অদল-বদল যেন মঞ্চকে এক নাটকীয় স্পন্দনে ভরিয়ে তোলে।

হিউবার্ট খোকনকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে জন মার্টিন বলেন, “সে আমার ছেলেবেলার বন্ধু। আজকের এই আয়োজনে সে শুধু অতিথি নয়, আমাদের একান্ত আপনজন।” 

অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়, চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। হিউবার্ট খোকনের কণ্ঠে একে একে ধ্বনিত হয় স্মৃতিমাখা গান- আমি বাংলায় গান গাই, আমি এক যাযাবর, চোখের নজর এমনি কইরা, এই পথ যদি না শেষ হতো প্রভৃতি। তাঁর কণ্ঠে গানগুলো যেন ফিরে পায় পুরনো দিনের সোনালি আবহ।

এক অনন্য মুহূর্তে বাঁশি বাজাতে বাজাতে দর্শকসারি থেকে মঞ্চে উঠে আসেন ফাবিহা সিদ্দিক। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় গান আয় খুকু আয় পরিবেশনের সময় তিনি যেন হয়ে উঠেন সেই ‘খুকু’। পরিবেশনার শেষে মিলেছে হলভর্তি দর্শকের করতালি। এরপর তিনি আরও পরিবেশন করেন কি মায়ায় বেঁধেছ আমায়, যা শ্রোতাদের হৃদয়ে গভীর সাড়া ফেলে।

অনুষ্ঠানের শিরোনাম আমি বাংলায় গান গাই ছিল সদ্যপ্রয়াত কিংবদন্তি শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। একই সঙ্গে পরিচিতি ঘটে ভবিষ্যতের দুই সম্ভাবনাময় শিল্পী- নীলাদ্রি চক্রবর্তী ও ফাবিহা সিদ্দিকের। নীলাদ্রির কণ্ঠে অখিলবন্ধু ঘোষের তোমার ভুবনে ফুলের মেলা আমি কাঁদি সাহারায় পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।

অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হলো সদ‍্য প্রয়াত প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজকে। শিল্পী হিউবার্ট খোকনের গান এবং জলদগম্ভীর কন্ঠে আবৃত্তি করলেন ডা. রশিদ আহমেদ। কবিতাটি ছিলো হেলাল হাফিজের বিখ‍্যাত কবিতা- পত্র দিও। গানের জলসায় একজন কবিকে স্মরণ করার এই দৃষ্টান্ত আমাদের বহুদিন মনে থাকবে। অনুষ্ঠান শেষে অনেকে এই অংশটুকু এবং পুরো অনুষ্ঠান ভালো লেগেছে বলে জানালেন। 

অনুষ্ঠানে শিল্পী হিউবার্ট খোকনের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় সুবীর নন্দীর জনপ্রিয় গান এক যে ছিল সোনার কন্যা। এতে যুক্ত হন জন মার্টিনের আবৃত্তি এবং নৃত্যশিল্পী অর্পিতা সোমচৌধুরীর নৃত্য। তিন শিল্পীর সম্মিলনে তৈরি হয় এক মোহনীয় আবহ- শিল্পের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ।

সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ডেরিক গোমেজ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান রিয়েল হোম প্রপার্টিজ। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিখুঁত কাজ করেছেন সিডনির প্রখ্যাত টেকনিশিয়ান আত্তাবুর রহমান। অনুষ্ঠানে ছবি ও ভিডিও তুলেছেন নন্দিত আলোকচিত্রী শিল্পী এডওয়ার্ড অশোক অধিকারী। 

অনুষ্ঠান শেষে সঞ্চালক জন মার্টিন বলেন- “এই বিদেশের মাটিতে সারাদিন আমরা ইংরেজি বললেও, ঘুমিয়ে যখন স্বপ্ন দেখি, সেটা কিন্তু বাংলাতেই দেখি। বাংলা মিশে আছে আমাদের প্রাণের গভীরে।” সেই অনুভব নিয়েই দর্শকেরা ফিরেছেন নিজ নিজ গন্তব্যে—হৃদয়ে বয়ে নিয়ে এক শীতের সন্ধ্যার উষ্ণ স্মৃতি।

ছবিগুলো তুলেছেন- এডওয়ার্ড অশোক অধিকারী ।